স্বদেশ ডেস্ক:
রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিতের আবেদন করলে সরকার বিষয়টি বিবেচনা করবে। তিনি বলেন, জেলখানায় যারা থাকেন এবং বহুদিন কারাদণ্ড ভোগ করেন ৪০১(১) ধারা (ফৌজদারি কার্যবিধি) অনুযায়ী তাদের সাজা নানাবিধ বিবেচনায় অনেক সময় স্থগিত করা হয়।
অপর দিকে খালেদা জিয়ার আইনজীবী ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছেন, অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করছেন যে, ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী সাজা স্থগিতের ক্ষমতা সরকারের আছে, তাই আইনের বিধান মোতাবেক এটা করা সরকারের একক দায়িত্ব। আমরা বলব, বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য তার দণ্ডাদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে তার নিজ ইচ্ছায় যেকোনো স্থানে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করা হোক।
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে দেশে বা বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি দাবির বিষয়ে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সাধারণত অনেক দিন সাজা খাটার পরে সরকার বিশেষ বিবেচনায় সাজা সাসপেন্ড (স্থগিত) করতে পারে। তারা যদি প্রমাণ করতে পারেন, সে রকম মামলা যদি তারা করতে পারেন, তবে সে বিষয়টি সরকার দেখবে।’
গত ৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বারে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত করে তাকে দেশে বা বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের আহ্বায়ক ও সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এ দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, সরকারের দায়িত্ব বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সুচিকিৎসা নেয়ার ব্যবস্থা করা। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ (১) ধারা মোতাবেক কোনো সাজার কার্যকারিতা শর্তহীনভাবে স্থগিত করার ক্ষমতা সরকারের হাতে। সরকার প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে আইনগতভাবেই চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারেন। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। তাই আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো দেশে কিংবা বিদেশে সুযোগ দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সাধারণত সাজা সাসপেন্ড করা হয় অনেক দিন সাজা খাটার পরে। সরকার বিশেষ বিবেচনায় এটা করে, করতে পারে। সে রকম কেস যদি তারা মেইক আউট করতে পারেন, তখন সরকার বিষয়টি দেখবে।
অন্য দিকে অ্যাটর্নি জেনারেলের বক্তব্যের বিষয়ে খালেদা জিয়ার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। সে ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করে তাকে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেয়া সরকারের মানবিক দায়িত্ব এবং বেগম খালেদা জিয়ার সাংবিধানিক অধিকার। তিনি বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, দণ্ডিত আসামিকে প্রমাণ করতে হবে যে তার দণ্ডাদেশ স্থগিত করা দরকার। তিনি বলেছেন, ৪০১ ধারা মতে সাজা স্থগিত করার ক্ষমতা সরকারের আছে, তাই আইনের বিধান মোতাবেক এটা সরকারের একক দায়িত্ব। যেহেতু অ্যাটর্নি জেনারেল স্বীকার করেছেন, আইনের বিধান আছে তাই আমরা বলব বেগম খালেদা জিয়ার জীবন রক্ষার জন্য তার দণ্ডাদেশ সাময়িকভাবে স্থগিত করে তার নিজ ইচ্ছায় যেকোনো স্থানে উন্নত চিকিৎসা দেয়ার ব্যবস্থা করার সুযোগ তাকে দিতে হবে।
খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনের বিধান আছে জরুরি ক্ষেত্রে সরকার ৪০১ (১) ধারা মতে যেকোনো দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা সাময়িকভাবে স্থগিত করতে পারে। বেগম খালেদা জিয়া তিনবারের প্রধানমন্ত্রী, একজন বয়স্ক মহিলা এবং পিজি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রতিবেদন অনুযায়ী তিনি অত্যন্ত অসুস্থ এবং তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন। আইনি প্রক্রিয়ায় তার জামিন সময়সাপেক্ষ এবং ইতোমধ্যে দেশের সর্বোচ্চ আদালত তার জামিনের আবেদন খারিজ করেছেন। সেহেতু আমি মনে করি একজন নাগরিকের বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার রয়েছে।